
নিজস্ব প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা অফিসঃবাদীকে ম্যানেজ করে নিজের অনিয়ম, দুর্নীতি ঢাকতে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নড়াইল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান এসে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বাদী ছাড়া এ তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এর আগে রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক কর্মচারী দবির উদ্দিনের দায়ের করা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রমে অংশ বাদীকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে বাদী ছাড়া প্রহসন মূলক তদন্ত সম্পন্ন হয়। তবে এ বিষয়ে বাদী সাতক্ষীরা সদর থানার শ্যালো গ্রামের আলী সরদারের পুত্র সাংবাদিক এস, এম রেজাউল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান তার স্ত্রী অসুস্থ হাসপাতালে থাকায় তিনি তদন্ত কার্যক্রমে সময় চেয়ে দরখাস্ত জমা দিয়েছেন। তবে তদন্ত কার্যক্রমের ঘটনার সত্যতা জানার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমানকে না পেয়ে তার ব্যবহৃত ০১৭০৮৪১৪১৩৯ নং মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অনুরূপ ঘটনার আরো সত্যতা জানার জন্য অভিযুক্ত সাতক্ষীরা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রোকনুজ্জামানের ব্যবহৃত ০১৭০৮৪১৪২০৪নং একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়ায় কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সায়েদুজ্জামান তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।এস এম রেজাউলের লিখিত অভিযোগের সূত্রে থেকে জানা যায়,সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শাল্যে গ্রামে অবস্থিত আবু জাফর সিদ্দিকীয়া এতিমখানা নামে একটি বেসরকারি ক্যাপিটেশন প্রাপ্ত এতিমখানা ছিল। যার রেজিস্ট্রেশন নং ২৮০/৯৯। উক্ত এতিমখানার কার্যক্রম ২০০৮ সালের পর থেকেই সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তিতে মোঃ রোকনুজ্জামান তৎকালীন সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হিসাবে গত ১৩/১০/ ২০১১ ইং তারিখে যোগদান করার পর থেকে শাল্যে আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী কবির হোসেন ও তার সহযোগিদের জোগসাজশে ভুয়া রেজুলেশনে রোকনুজ্জামানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংক, সাতক্ষীরা শাখার চেকের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। রোকনুজ্জামানের সীমাহীন দূর্নীতির বিষয়ে তৎসময়ে একাধিক স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বিতরন রেজিষ্টারের তথ্যমতে ২০১৭ সালের পূর্বের বিতরনকৃত টাকার কোন রেকর্ড সেখানে নেই। উক্ত রেকর্ড রোকনুজ্জামান গায়েব করে দিয়েছে। তবে ২০১৭- ২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ২,৪০,০০০ টাকা ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে কবির হোসেন ও তার সহযোগিদের মাধ্যমে উত্তোলনে করে আত্মসাৎ করে। অস্তিত্বহীন শাল্যে আবু জাফর সিদ্দিকীয়া এতিমখানার নামে রোকনুজ্জামান গত ২০১১ সালে সদর উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। অপরদিকে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসা শত শত গরু বাবদ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রদানের নামে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করতো। এসব টাকার একটি অংশ পাঠানো হতো তৎকালিন ফ্যাসিস্ট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের এপিএস তৌহিদুজ্জামানের কাছে। এপিএস তৌহিদুজ্জামান ছিল রোকনুজ্জামানের আপন মামা। আর এর বিনিময়ে রোকনের সব অপকর্মের শেল্টার দিত তার মামা। তৎকালীন সময়েএ বিষয়ে নিয়ে বিভিন্ন দৈনিক স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও রোকনুজ্জামানকে কখনও জেলার বাইরে বদলী করা হয়নি। বদলীর আদেশ দিলেও এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাতিল হয়ে যেতো। এসব অবৈধভাবে আয়কৃত ৭০ লক্ষাধিক টাকা সে সময় রোকনুজ্জামান নিজ ও তার স্ত্রী তামান্না খাতুনসহ বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনের নামে ঢাকা আহছানিয়া মিশন, সাতক্ষীরা অফিসে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখেন। এতসব দুর্নীতি, অভিযোগের পরেও তাকে ২০১৯ সালে সহকারি পরিচালক পদে পদোন্নতি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলাতেই ১৮ বছর ধরে সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অফিসে চাকরী করছেন । পরিবর্তীত প্রেক্ষপটে সকলের ধারনা ছিল আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে রোকনুজ্জমানকে শাস্তিমূলক বদলী করা হবে। কিন্তু তাকে বদলী না করে খুঁটির জোরে সাতক্ষীরায় স্বপদে বহাল রয়েছেন। এখন তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় অব্যাহতভাবে নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালককেও তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপে রাখেন। কিছুদিন আগে তার অনুগত ব্যাচমেটকে আশাশুনি থেকে সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক হিসেবে সদ্য বদলী করে এনেছেন। যাতে তার পূর্বের সকল অপকর্ম ধামা চাপা দেওয়া যায়। গত ২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় চাকরী করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ রোকনুজ্জামান এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজ মোড় সংলগ্ন যশোর-কালিগঞ্জ প্রধান সড়কের পাশে ৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদসম ৭ তলা ভবন নির্মান করেছে। বিপুল পরিমান এই টাকা ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সেখানে তার ২ ভাইয়ের নাম দেয়া হয়েছে। এছাড়া এই বাড়ির পাশে সম্প্রতি প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যে আরও ৫ শতক জায়গা রোকনুজ্জামান নিজ নামে কিনেছেন বলে জানা যায়। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রেজিঃ দলিল নং ৩৫৪৮, ২০২০ সালে ৪৫৫৬, ৫৯৩৮, ৫৯৩৯, ২০২২ সালে ৩৬৬০ ও ১১৫৫২ নং রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে বিশাল অংকের টাকা দিয়ে নামে বেনাম জমি কেনা ছাড়াও নগদ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকে রাখার তথ্য উঠে এসেছে।কয়েকটি মূল্যবান সম্পত্তি কিনেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া স্বনামে বেনামে তার বিপুল পরিমান সম্পত্তি ও নগদরাখার তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের ৬ষ্ট গ্রেডের একজন কর্মকর্তা হয়ে রোকনুজ্জামানের সম্পত্তির পরিমান দেখে সাতক্ষীরাবাসী বিস্মিত হয়েছেন।