
মোঃ মেহেদী হাসান, সম্পাদক ও প্রকাশক।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এখন শীতের স্নিগ্ধ ছোঁয়া। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, অসংখ্য নদ-নদী আর বিস্তীর্ণ জলাভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া এখানকার প্রকৃতিতে এনেছে এক নতুন রূপ। ঘন কুয়াশার চাদর আর শিশিরভেজা সকাল—এ যেন শ্যামনগরের এক শান্তিময় প্রতিচ্ছবি।কৃষকের মুখে হাসি নতুন ফসলের সমারোহ
শ্যামনগরের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। শীতকাল এখানে কেবল ঠান্ডা আবহাওয়া নিয়ে আসে না, নিয়ে আসে নতুন ফসলের বার্তা। আমন ধান কাটা শেষ, আর মাঠ এখন প্রস্তুত রবিশস্য চাষের জন্য। সরিষার হলুদ ফুল, আলু, মুগডাল এবং নানা ধরনের শীতকালীন সবজির চাষে ভরে উঠেছে কৃষকের জমি। এই সময়ে ক্ষেতের কাজ ও নতুন ফসল তোলার উৎসব শ্যামনগরের গ্রামীণ জীবনে যোগ করে এক ভিন্ন মাত্রা।
জলাভূমি ও মাছের রাজ্য,শীতকালীন অতিথি শ্যামনগর অঞ্চলটি অসংখ্য খাল-বিল, নদী ও ঘের (মাছের খামার) দ্বারা বেষ্টিত। শীতকালে এই জলাভূমিগুলো হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন উত্তর দিক থেকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি এই অঞ্চলে আসে, তখন প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক মনোমুগ্ধকর স্থানে পরিণত হয়। স্থানীয় ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোতেও শীতের কারণে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। ঐতিহ্যের উষ্ণতা পিঠা ও খেজুরের গুড়
শীত মানেই শ্যামনগরের বাড়িতে বাড়িতে পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। এই সময়ে নবান্নের আমেজ লেগে থাকে। খেজুরের রস থেকে তৈরি নলেন গুড় ও পাটালির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। কুয়াশা ঢাকা ভোরে খেজুর রস আর সন্ধ্যার আড্ডায় গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন আতিথেয়তার প্রতীক। স্থানীয়দের বক্তব্য স্থানীয় সাংবাদিক আবুজার গাজী বলেন, “শীতকাল আমাদের জন্য আনন্দের সময়। নতুন ধান আসে, পিঠাপুলি হয়, আর সবাই মিলেমিশে রোদ পোহানোর যে আনন্দ—তা অন্য কোনো ঋতুতে পাওয়া যায় না।”শীতের এই ঋতু শ্যামনগরের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় এক বিশেষ প্রশান্তি নিয়ে আসে, যেখানে কঠোর জীবনযাপনের মাঝেও লুকিয়ে থাকে উৎসব আর ভালোবাসার উষ্ণতা।