
আবুজার গাজী, খুলনা বিভাগীয় প্রধান।
সাতক্ষীরা: শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে প্রকৃতির বুকে। এর সঙ্গে সঙ্গেই যেন এক নতুন রূপে সেজে উঠেছে বাংলাদেশের উপকূলীয় রত্ন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা এবং সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকা। কুয়াশার চাদরে মোড়া এই সময়টিতে সুন্দরবনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আরও বেশি মোহময় হয়ে ওঠে।
পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে সুন্দরবনে
শীতকাল মানেই সুন্দরবন ভ্রমণের সেরা সময়। আকাশ পরিষ্কার থাকায় এবং নদী শান্ত থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমাচ্ছেন শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, দোবেকি ও কৈখালী রেঞ্জের বিভিন্ন স্পটে।
মোহময় কুয়াশা: খুব ভোরে নদী পারাপারের সময় ঘন কুয়াশার দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। সূর্যের প্রথম আলো যখন কুয়াশা ভেদ করে ম্যানগ্রোভ বনের পাতায় পড়ে, সেই দৃশ্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়।
বন্যপ্রাণীর আনাগোনা: শীতকালে বনের গভীরে বিভিন্ন খাল ও নদীর চরে রোদ পোহাতে আসে বন্যপ্রাণীরা। হরিণ, বানর, আর ভাগ্য ভালো থাকলে বাঘের পায়ের ছাপ বা সরাসরি দেখা মেলার সম্ভাবনাও বাড়ে এই সময়ে।
নৌকাবিহার: পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা ছোট নৌকায় করে সুন্দরবনের ভেতরের সরু খালগুলো ঘুরে দেখছেন, যা শীতকালে আরও আরামদায়ক। শ্যামনগরের শীতকালীন জীবনযাত্রা
সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে থাকা শ্যামনগর উপজেলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ও লেগেছে শীতের ছোঁয়া।
কৃষি ও ফসল: শীতকালে এই এলাকার সবজি চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করেন। মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুল আর বিভিন্ন শীতকালীন সবজির সমারোহ।
মধু ও মৎস্য আহরণ: সুন্দরবন এলাকায় এই সময়ে মধু সংগ্রহ কিছুটা কমলেও মৎস্যজীবীরা নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরতে ব্যস্ত। এছাড়া, সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে কাঁকড়া আহরণও চলছে জোরকদমে।
পিঠা-পুলির উৎসব: গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে চিরায়ত পিঠা-পুলির উৎসব। সন্ধ্যার পর আগুন পোহানো আর জমায়েত হয়ে গল্প করার দৃশ্য এখন ঘরে ঘরে।
বন বিভাগের প্রস্তুতি
শীতকালে পর্যটকদের আগমন বাড়ায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষায় বনকর্মীরা নিয়মিত টহল জোরদার করেছেন।
মুন্সিগঞ্জ রেঞ্জের এক কর্মকর্তা জানান, “শীতকাল হলো সুন্দরবনের মূল পর্যটন মৌসুম। আমরা পর্যটকদের বন বিভাগের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে উৎসাহিত করছি এবং পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ নজর রাখছি।”
সব মিলিয়ে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও সুন্দরবন এখন প্রকৃতির অপরূপ সাজে সেজে শীতকালীন পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।