
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের চাকরিতে থেকেও সরাসরি রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি ব্যবহার এবং সেই প্রভাবে সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে এএসআই গোপাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কর্মরত থাকাকালীন তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে জাহির করতেন। বর্তমানে যশোর জেলায় কর্মরত এই বিতর্কিত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা, খুলনা ও গোপালগঞ্জে সম্পদের পাহাড় গড়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এএসআই গোপাল চন্দ্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হলেও আদতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চাকুরিকালীন সময়েও তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি হোল্ড করতেন, যা সরাসরি সরকারি চাকুরির বিধিমালার পরিপন্থী। রাজনৈতিক উচ্চপর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় সাতক্ষীরা ডিবিতে থাকাকালীন তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না।
২০১৫ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছর সাতক্ষীরায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এই গোপাল। মূলত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তিনি ‘আটক বাণিজ্য’ শুরু করেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাকে দাবিকৃত টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো বা দীর্ঘ মেয়াদে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এএসআই গোপালের বিরুদ্ধে কেবল পেশাগত দুর্নীতিই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও চরম নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উঠেছে। তার স্থায়ী বাড়ি খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায়। জানা গেছে, ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিয়ে করেন। অভিযোগ আছে, প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। পরবর্তীতে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে পদোন্নতি পাওয়ার পরপরই তিনি সেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেন। ক্ষমতার দম্ভে নিজ জীবনসঙ্গিনীর সাথে এমন প্রতারণার ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।
একজন এএসআই হয়েও গোপাল চন্দ্রের সম্পদের পরিমাণ দেখে রীতিমতো হতবাক স্থানীয়রা। সাতক্ষীরায় থাকাকালীন সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম চালিয়ে অর্জিত টাকায় তিনি বিভিন্ন স্থানে
বিঘার পর বিঘা জমি খুলনা ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিজের ও নিকটাত্মীয়দের নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন।
বিলাসবহুল ভবন অবৈধ আয়ে তিনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন বলে জানা গেছে।
বেনামি বিনিয়োগ পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতেও তার বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে।
৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এএসআই গোপাল সুকৌশলে নিজেকে আড়াল করে যশোর জেলায় কর্মস্থল পরিবর্তন করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে কর্মরত থাকলেও তার অতীত অপকর্মের বিচার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন সাতক্ষীরার শত শত ভুক্তভোগী। অভিযোগ আছে, তিনি এখনো তার পুরনো রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভাগীয় তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা থেকে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাতক্ষীরার সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী জনতা দাবি জানিয়েছেন, পুলিশের পোশাকে যারা রাজনৈতিক দালালি করেছে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। এএসআই গোপালের ছাত্রলীগে সংশ্লিষ্টতা, ব্যক্তিগত প্রতারণা এবং তার অবৈধ সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশ সদর দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।