
মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের জেলেখালী গ্রামে এক মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ইঁদুরের উপদ্রব ঠেকাতে নিজের সবজি ক্ষেতে পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রথীন্দ্রনাথ রপ্তান (৫২) নামের এক সবজি চাষি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত রথীন্দ্রনাথ রপ্তান জেলেখালী গ্রামের মৃত শচীন্দ্রনাথ রপ্তানের ছেলে। তিনি মূলত অন্যের জমি লিজ নিয়ে মাছের ঘেরের বেড়িতে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করতেন। এই চাষের ওপরই তাঁর পরিবারের জীবিকা নির্ভর করত।
সম্প্রতি সবজি ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল। এই ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষার্থে রথীন্দ্রনাথ রপ্তান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাঁর সবজি ক্ষেতের চারদিকে অবৈধভাবে বিদ্যুতের তার টেনে একটি বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে রথীন্দ্রনাথ রপ্তান বাড়ি থেকে তাঁর সবজি ক্ষেতের দিকে যান। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। এই দীর্ঘ সময় তিনি বাড়িতে না ফেরায় তাঁর স্ত্রী চিন্তিত হয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হন।
কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর, সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে সবজি ক্ষেতের কাছে গিয়ে তাঁর স্ত্রী দেখেন, রথীন্দ্রনাথ রপ্তান সেই বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে আছেন।
তাঁর চিৎকারে স্থানীয় প্রতিবেশীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে বিদ্যুতের তীব্র শক লেগে রথীন্দ্রনাথের প্রাণবায়ু সম্পূর্ণভাবে নিভে গেছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, অসাবধানতাবশত নিজেই সেই বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়েন রথীন্দ্রনাথ।
এই ঘটনায় জেলেখালী গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফসলের ক্ষতি রোধে অনেকেই এমন অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে থাকেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। অসতর্কতার ফলেই এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল বলে তাঁরা মনে করছেন।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্যামনগর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি, এই ধরনের বিপজ্জনক অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি না করার জন্য জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এই ঘটনা স্থানীয় অঞ্চলে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং তার থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির বিষয়টি পুনরায় সামনে এনেছে।