
মোঃ আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর বাজার গেট সংলগ্ন এলাকায় নদী ভাঙনের শিকার তিনটি পরিবার গত ২০ দিন ধরে রাস্তায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। দীর্ঘ বছর ধরে বসবাসরত এই পরিবারগুলো হঠাৎ নদী গর্ভে বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন খোলা আকাশের নিচে দিন-রাত কাটাচ্ছে।
ভাঙনের পর থেকে স্থানীয় একটি রাস্তায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে পরিবারগুলো। বৃষ্টি, রোদ, ঝড়—সব কিছুর মাঝেও তাদের মাথার উপর কোনো ছায়া নেই। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। নেই খাবার, নেই বিশুদ্ধ পানি, নেই স্বাস্থ্যসেবা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এসে আশ্রয় ও ত্রাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এখনো তারা কোনো সহায়তা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তি বলেন, “ভিটেমাটি সব নদীতে চলে গেছে। এখন রাস্তায় দিন-রাত কাটে। সন্তানদের মুখে খাবার নেই, রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। শুধু আশ্বাস আর আশ্বাস, কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নারীদের জন্য নেই নিরাপদ টয়লেটের ব্যবস্থা, আর অসুস্থদের চিকিৎসা তো দূরের কথা।
স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই তিন পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
স্থানীয় যুব সংগঠন ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সহায়তা করলেও তা খুবই সীমিত।
সাধারণ জনগণের প্রশ্ন—একুশ শতকে এসেও একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে কেন একজন মানুষ রাস্তায় ঘুমাবে?
এই তিন পরিবার প্রশাসনের কাছে আশু সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। তারা চায়, তাদের মাথা গোঁজার মতো একটি ছায়া, বেঁচে থাকার মতো একটি সুযোগ।
নদী ভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিন্তু তা মোকাবিলায় প্রশাসনিক দায়িত্ব ও মানবিক সহানুভূতি থাকলে অন্তত খোলা আকাশের নিচে মানুষকে ২০ দিন থাকতে হতো না। এখনই সময়, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর।