মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার
সাতক্ষীরার শ্যামনগর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চলছে সেবার নামে ভয়াবহ দুর্নীতি, ঘুষ ও হয়রানির মহোৎসব। সাধারণ গ্রাহক সেবা নিতে গেলেই পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
অফিসে গেলে প্রথমে এক কর্মকর্তা বলেন, দুইতলায় যান ম্যাডামের কাছে। সেখানে গেলে ম্যাডাম বলেন, “নিচে স্যারের কাছে যান।” এমন দৌড়ঝাঁপ করতে করতে দিনশেষে হাল ছেড়ে দেন গ্রাহকরা। তবুও সমাধান মেলে না।
একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ অফিসে গেলে সম্মানের বদলে মেলে তাচ্ছিল্য, কটূ কথা, আর দর কষাকষির ইঙ্গিত। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ফাইল গায়েব হয়ে যায়, অথবা সংযোগে ‘প্রযুক্তিগত সমস্যা’ সৃষ্টি হয়।
একজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজি নই ভাই, দিলে আমার বাড়ির বিদ্যুৎ কেটে দেবে — অন্ধকারে থাকতে হবে।
অন্যজন বলেন, সেবার নামে ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। সবাই কাজটা একে অপরের ঘাড়ে ফেলে দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিল সংশোধন, নতুন সংযোগ বা মিটার সমস্যা নিয়ে গেলে ২-৩ দিন ধরে অফিসে ঘুরিয়েও কাজ করানো যায় না। বরং নানা অজুহাতে টেবিল থেকে টেবিলে পাঠানো হয় গ্রাহককে।
আরও ভয়াবহ তথ্য জানায় স্থানীয়রা—বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম স্যারের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ জানালে তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসুন।
কিন্তু গ্রাহকের দাবি, তারা লিখিত অভিযোগ ইতোমধ্যে জমা দিয়েছেন, অথচ অফিস বলছে অভিযোগ ‘হারিয়ে গেছে’।
এই ঘটনাকে গ্রাহকরা বলছেন, এটা নিছক হয়রানি ও প্রতারণা।
তাদের প্রশ্ন — অভিযোগ দিলে যদি সেটিই গায়েব হয়ে যায়, তাহলে ন্যায়বিচার কোথায়?
স্থানীয়রা বলছেন, অফিসে এমন এক ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
একজন দোকানদার বলেন, অভিযোগ দিলে তারা বলে কাজ হবে না, বিদ্যুৎ কেটে দেবে — এই ভয়ে আমরা চুপ থাকি।
গ্রাহকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে বলেন, এই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস গ্রাহকদের জন্য এক যন্ত্রণার কেন্দ্রে পরিণত হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, জবাবদিহিতা ও তদারকির অভাবে বিদ্যুৎ অফিস এখন দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
শেষ পর্যন্ত শ্যামনগরের সাধারণ মানুষ একটাই প্রশ্ন তুলেছেন —বিদ্যুতের আলো কি শুধু অফিসে জ্বলে, নাকি জনগণের ঘরেও জ্বলার অধিকার আছে?
এবং তাদের একটাই দাবি —
সেবার নামে হয়রানি বন্ধ করো, অভিযোগ হারানোর নাটক বন্ধ করো, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনো!