নিজস্ব প্রতিবেদক
পৌষের হাড়কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশা মোড়ানো সকালে গ্রামীণ জনপদে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে সুস্বাদু খেজুরের রস। শীতের আগমনে গাছীরা (যারা রস সংগ্রহ করেন) ব্যস্ত হয়ে পড়েন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে। এই রস যেন শীতের সকালে এক পরম তৃপ্তি আর বাঙালির ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কুয়াশাভেজা ভোরে যখন চারপাশ ঝাপসা থাকে, তখনই গাছীরা কাঁধে বাঁশের ভার আর মাটির কলস নিয়ে মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে চলেন। আগের রাতে গাছের উপরিভাগ ছেঁটে যে মাটির হাঁড়ি বা ‘ঠিলা’ বেঁধে রাখা হয়েছিল, সারারাত চুইয়ে চুইয়ে তাতে জমা হয় সুমিষ্ট রস। সেই টাটকা রসের ঘ্রাণ চারপাশের বাতাসকে মৌ মৌ করে তোলে।
খেজুরের রস কেবল পানীয় হিসেবেই নয়, বরং বাঙালির পিঠা-পুলির উৎসবে অন্যতম প্রধান উপকরণ।
কাঁচা রস,সকালে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর পাশাপাশি গ্লাসে গ্লাসে কাঁচা রস পান করা গ্রামের এক পরম আনন্দ।
গুড় ও পাটালি রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ঝোলা গুড় এবং সুগন্ধি পাটালি।
পিঠা-পুলি এই রস দিয়েই তৈরি হয় ভাপা পিঠা, দুধ-চিতই এবং মজাদার পায়েস।
বর্তমানে খেজুরের রস পান করার ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ রোধে খোলা হাঁড়ির কাঁচা রস পান না করে তা ভালো করে ফুটিয়ে বা গুড় তৈরি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
নগরায়নের প্রভাবে ও গাছ কাটার ফলে দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে শত বাধা সত্ত্বেও শীতের সকালের এই 'মিষ্টি অমৃত' আজও বাঙালির মনে নস্টালজিয়া আর আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের আরও বেশি করে খেজুর গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করা প্রয়োজন।