মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন শ্যামনগর উপজেলা ক্রাইম রিপোর্টার
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
সুন্দরবনের নদী-খাল পেরিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন টাইগার কামাল, সরকারি অনুমতিপত্র নিয়েই। ভাটার সময় খালে জাল পেতে রেখে জোয়ারের সময় তা সামলে আসছিলেন তিনি ও তাঁর সঙ্গী। হঠাৎই ঘটে যায় এক ভয়ংকর ঘটনা।
হঠাৎ বাঘের আক্রমণ
ক্লান্ত শরীরটা একটু সোজা করার জন্য দাঁড়াতেই কামালের চোখে পড়ে ১০-১২ হাত লম্বা এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার! মুহূর্তেই বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর। নদীর চরের নরম কাদায় পড়ে যান কামাল। বাঘ তাকে চেপে ধরে রাখে।
মৃত্যুর মুখে জীবনযুদ্ধ
৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে বাঘ কামালকে কাদায় চেপে ধরে রাখে। শ্বাস নিতে কষ্ট, কান বন্ধ, চারদিকে নিস্তব্ধতা। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। সঙ্গীকে বলেন—
“ভাই, আমাকে ফেলে যেও না, আমি এখনো বেঁচে আছি।”
ভয়ংকর থাবার আঘাত
একপর্যায়ে বাঘ আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথম থাবা চোখ থেকে মাথা পর্যন্ত, দ্বিতীয় থাবা মাথার অন্য পাশে, আর কয়েকটি থাবা বুক চিরে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থাতেও কামাল প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যান।
চোখে কাদা ছুড়ে মারার কৌশল
সাহসিকতার সঙ্গে দুই হাত দিয়ে তিনি বাঘের গলা চেপে ধরেন। আর সঙ্গীকে বলেন—
“বাঘের চোখে কাদা ছুড়ে মারো।”
সঙ্গী মরিয়া হয়ে কাদা ছুড়তে থাকেন। একসময় কাদায় চোখ ঢেকে যায় বাঘের। অন্ধ হয়ে যাওয়া বাঘ অবশেষে বনের দিকে ছুটে যায়।
জীবন ফিরে পাওয়া
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন টাইগার কামাল। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে সঙ্গী নৌকায় তুলে নেন। প্রায় দুই ঘণ্টা নৌকা বেয়ে অবশেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
রক্তাক্ত স্মৃতি, অদম্য সাহস
সেই দিনের পর থেকে টাইগার কামালের জীবনে নেমে আসে কালো ছায়া। মাথা, মুখ ও বুকে এখনো রয়েছে বাঘের নখের দাগ। ভয়ংকর সেই রাত তাঁকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়।
আজকের টাইগার কামাল
তবুও তিনি অদম্য সাহসের কারণে সুন্দরবনের মানুষের কাছে কিংবদন্তি। সবার কাছে তিনি এখন "টাইগার কামাল"—বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা এক জীবন্ত প্রতীক।
দ্বিতীয় পর্বে জানানো হবে, আজ তিনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন, এবং কীভাবে এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর জীবন কাটাচ্ছেন।